Sunday, 5 April 2020

নিদ্রাহীন রাতের আলো

৬-৭-২০১৯
আজ বাসায় আরিফ এলো। দুপুরবেলা বাধ্য হয়ে পরীক্ষার পড়া পড়তে পড়তে মোবাইলে হঠাত আরিফের নাম দেখে চমকে উঠলাম। আমার ধারণা আরিফ,আকিব,নোবেল ভাই এবং মাহতাব ভাই কে কোন অকেশানে না গেলে তারা আমার অস্তীত্ব সম্পর্কে বিশেষ একটা ভাবেনা। আমি খুশি ও আশ্চর্য হয়ে আরিফের ফোন ধরলাম ( আরিফ লিখতে গিয়ে আকিব লিখে ফেলছি বার বার, অথচ দুজনের সম্পর্কে মাথায় এখন দুইটা আলাদা চিন্তা ঘুরছে) । আরিফ আমার বাসার সামনে এসে দাড়ালো, ঠিক আমার ক্যাম্পাসের আট নাম্বার গেইটের সামনে, যেখানে কয়দিন আগে নোবেল ভাই আর লোহা এসে রিকশা থেকে নেমেছিল। এসেই জড়িয়ে ধরলো আমাকে। বহূদিন পরে এসেছে। আমরা ঘাটপাড় গিয়ে চা খেয়ে বাসায় আসলাম।
এর পর আমাদের নানান কথার মাঝে হঠাৎ উঠে এলো নোবেল ভাই এর কথা। নোবেল ভাইয়ের লেখার কথা। আরিফ নোবেল ভাই এর লেখার অনেক ভক্ত। সব সময় নোবেল ভাইর সাইটে ঢুকে লেখা পড়ে। সাথে সাথে আমার নিজেকে অপরাধি মনে হতে লাগলো। বছর দুই আগে জুনায়েদ ভাই যখন প্রথম আমাকে নোবেল ভাই এর সাথে যোগাযোগ করতে বলে এবং এই ছেলেকে আমি বহু আগেই আমার প্রিয় রাইভাল স্কুলে সার্কাস দেখাতে দেখেছিলাম, খুব আগ্রহ নিয়ে তাকে স্টক করা শুরু করি। খুব আঁটসাঁট বেধেই তার এমন কিছু দেখতে চাচ্ছিলাম, যা দেখলে আমি হয় তাকে নিয়ে হাসতে পারবো। এটা হবে গার্লস স্কুলে এসে এত ভাব দেখানোর একটা নিশ্চুপ রিভেঞ্জ। কিন্তু তার প্রোফাইল এ ঢুকে কেমন একটা মায়া জমে গেলো। তার ওয়াল থেকেই তার bilbilu.blogspot.com সাইট টা দেখি। ভেতরে ঢুকে একটু পড়ে দেখি। অসম্ভব সুন্দর করে গুছিয়ে আগোছানো লেখা। এর পরে কত শত বিকেল পার হয়ে গেলো। আজ আরিফের কথা শুনে মনে পড়ে গেল, এরকম একটা সাইট এক্সিস্ট করে।আরিফ বাঁশি বাজালো। আমি আমার সদ্য কেনা বেজ গিটার টা আরিফকে দেখালাম, যদিও সে বেজ এর ব টা ও বুঝেনাই বলেই আমার ধারণা। এর পর আরেক কাপ চা খেয়ে আরিফ কে বিদায় দিলাম।
বাসায় এসে খুবই অশান্তি লাগছিল সব। গত কাল বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম রাতের সাড়ে দশটায়, কিন্তু আজ বৃষ্টি হচ্ছেনা, অথচ খুব ভিজতে ইচ্ছে হল। বাইরে বেরিহে হেটে আসলাম।
ঢাকায় অনেক গুলো মহাসড়কে রিক্সা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তারা আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনে কালকের পরিক্ষা ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে। সেই খুশিতে বই বন্ধ করে গান শুনলাম। কোল্ডপ্লে আর অর্থহীন। নিতু আজ ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই। নাহয় ওকে আজ আরিফের সাথে হওয়া কথাগুলোর ব্যাপারে ওর মতবাদ জানতাম। যদিও আমি জানি ও খুবই উত্তম শ্রোতা ও খুবই বাজে বক্তা। কিছুই বলতে চায় না। ও হ্যা, ওর বান্ধুবিরা মিলে আজ বৃষ্টিতে ভিজেছে। নোয়াখালীর বৃষ্টিতে ভেজার মত সুখ কি আর বসুন্ধরার ঝুম বৃষ্টিতেও পাওয়া যায়? তার চেয়ে ভেজা কাক হয়ে থাক আমার মন।
রান্না করেছে আলু ভাজি আর ডিম সিদ্ধ। বমি চলে আসলো কেন জানি। খেতে পারলাম না। আমার মত নব্য পেটুক একটা ছেলে না খেয়ে থাকা মানেই কিন্তু এক নিদারুণ কষ্টের। ক্ষিদা থেকে বাঁচতে কিছুক্ষন পাবজি খেললাম। এর পর একটা অদ্ভত কাজ করে বসলাম। নোবেল ভাই এর সাইটে চলে গেলাম। সেইই দুই বছর আগের একবারের এক পলক দেখে সাইট টার ইউ আর এল মনে থাকায় নিজেকে খুবই ব্রিলিয়ান্ট মনে হল।
সাইটে গিয়ে আমি পাগল হয়ে গেলাম। এত্ত লেখা, এত্ত। আমি কাল ঘুম থেকে উঠেই এট নিতু কে দিব। ওর সারাটা দিন অনেক ভালো কাটবে আশা করি, যদি না সিরিজ দেখার মাঝে সময় পায়।
সব গুলো লেখার শিরোনাম পড়ে আমার নাম লিখে সার্চ দিলাম। তিন চারটা আর্টিকেল আসলো। নিজেকে খুব অপরাধি মনে হল। আমি কেন এই তীরে আগে আসলাম না। ইশশ এই মূহূর্তে এক কাপ চা আর একটা সিগারেট ধরিয়ে দিয়ে যদি পুরো সাইট টা পড়া যেত। রাতের বাজে সাড়ে চার টা।
বরিশাল ট্যুরের কথা মনে পড়ে গেলো। বহূদিন নোবেল ভাই কে দেখিনা। শুনলাম এবং দেখলাম আকিব দেশে আসলো। অথচ আমি অনেক পরে সেটা জানলাম। আকিব যেদিন চলে যাচ্ছিল, সেদিন আমার চোখে পানি আসতে চাচ্ছিল বার বার। বিচ্ছিরি এবং হাস্যকর একটা ব্যাপার হবে ভেবে খুব কষ্টে চেপে রাখি। কিন্তু শালা আসার পর এইরকম একটা কাজ করতেসে। কোন কল নাই, টেক্সট নাই, দেখা নাই। ওইদিন ওর ছবিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কমেন্ট করলাম "ভুলে গেসস "
আকিব উত্তর দিল "ভাই ভুলিনাই, রাজপথ ছাড়িনাই'
ইচ্ছা করতেসিলো আকিবকে একটা মোটা বাঁশ দিয়ে এক বাড়ি মেরে খাটে শুয়ে একমাস পাব্জি খেলার সুযোগ করে দিই।
সমস্যা হল আমি নোবেল ভাই না। আমি রিফাত। এজন্য কেউ খোজ না নিলে আমি রাগ করা শুরু করি। অথচ আমিই কারো খোজ নিই না। এরকম হলে ত নোবেল ভাই ই আমার উপর রাগ করার কথা। কিন্তু সে সুযোগ আমি দিই না। অনেক দিন পর আমি কল দিয়ে নিজেই একটু জোরে জোরে কথা বলি, যেন সেই সুযোগ না পায়।

সকাল হবে একটু পর। পাখি ডাকা শুরু করে দিয়েছে। এদিকে একটা পাখি হকার টাইপ। অন্যদের আওয়াজ ছাপিয়ে তার আওয়াজ ছড়িয়ে যায় চারপাশে। টেবিলের সামনের ওয়ালে জহির রায়হানের হাসিমাখা ছবি। মন ভালো হয়ে গেলো। রুমে সাবাব নেই, তার মনে হয় টাইফয়েড হয়েছে। রুমে কেউ না থাকলে একাকী লাগে, আবার স্বাধীন ও লাগে। এখন স্বাধীন লাগছে। রুমের লাইট জ্বালিয়ে রেখেছি।
আর লিখছি খুট খাট আওয়াজ করে।
হারিয়ে গিয়েছি এটাই জ্বরুরি খবর হয়ত বা....
ও হ্যাঁ সেদিন সামিনের সাথে তাদের বাসার ছাদে এয়ারপোর্টে বিমানের ওঠানামা দেখতে দেখতে গেয়েছিলাম

No comments:

Post a Comment

মাতাল নদীর রোদ ও পিংক ফ্লয়েড

এক লোক ট্রল করে ফেবু তে এই লোকের গাওয়া পিংক ফ্লয়েডের উইশ ইউ আর হিয়ার এর বাংলা ভার্শান দিলো ।  বাট আমার গান টা অসম্ভব ভালো লাগে । এক ধরণের ঘো...