Sunday, 5 April 2020

গোলার্ধের দীর্ঘতম রাত


সকাল সকাল কানের কাছে মোবাইলে এলার্ম টোন সেট করা গলা টিপে ধরে রাখা মুরগির কর্কশ আর্তনাদে ঘুম যত না অলসতায় ভাঙলো, এর চেয়েও দশগুন বেগে হাত গিয়ে অটোমেটিক মোবাইল তুলে এলার্ম বন্ধ করে দিল। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। আমি শুয়েই থাকি, এই মুরগির গলা টিপে মেরে ফেলা আমার হাত অটোমেটিক ই করে এখন। তবে আবার পরমূহুর্তেই আরেকটা মুরগি ডাকে "ক্রক্রিক্রিউ ক্যান.... "

ও, আজ পরীক্ষা ছিল। সকাল ৮ টায়। ফাইনাল পরীক্ষা। DLD ( ডিজিটাল লজিক ডিজাইন)। ডি এল ডি বলতে গেলে ডালডার কথা মাথায় আসে,তখনই আমাদের মাসার নিচের চুল্লার চা দোকানের ডালডা দিয়ে তৈরী করা পরোটার কথা মনে পড়ে যায়। আহা! কি আবেদনময়ী পরোটা। শালার....

এই নির্বাসিত জীবনে অগত্যা আমাকে একটা মুরগীর ডিম মাথার বদলে কড়াইয়ে ফাটিয়ে ভেজে ডাল দিয়ে সাদা ভাত মেরে সময়ের কথা চিন্তা করে টয়লেটের মায়া বিসর্জন দিয়ে গুটি গুটি পা এ ভার্সিটির পানে ছুটলাম।

পরীক্ষা দিতে বসে দেখলাম এই পৃথিবীর বিষাদগ্রস্হ মেঘময় এক মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তার গায়ের মধ্যে লেখা Ans every question.

চারিদিকে সবাই কত ক্সছে, কিন্তু কত দূরে।
এদিকে সেদিকে কলমের খচখচ। কারো বিন্দুমাত্র সময় নেই প্রশ্ন নিয়ে চিন্তা করার। পুরো হলে আমিই সবচেয়ে বেশি চিন্তা করছি প্রতিটি প্রশ্ন নিয়ে।

কলমের কালি যখন শেষ হচ্ছেনা একফোটাও, তখন নানা রকম জীবনমুখি বিজনেস আইডিয়া আমার মাথায় ঘুরছে, ঘুরছে ভার্সিটি থেকে পাশ না করলে কি কি করতে হবে, কিভাবে স্যাটেল হওয়া যায়, কি কি জিনিস শুরু করা যায় এইসব হাঙ্কি পাঙ্কি।

হল থেকে বের হয়ে দেখি সবার মন খারাপ। চুপ করে দাড়ালাম তাদের পাশে। তারা সবাই আপসেট কারণ এই ইজি প্রশ্নে নাকি তারা দুই একটা আন্সার ফুলমার্ক শিউর করতে পারেনাই।
আস্তে করে "তোজ্জিবন" বলে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম চা গিলতে।

বাসায় যাইতে দেখি লোর্দমাক্ত পথে পা দেই এক দিকে পা সাইই করে আমার অগ্রগতির মত নিচের দিকে চলে যাচ্ছে স্লিপ করে।

বাসায় এসে দিলাম ঘুম। নামাজ মিস যেন না হয় এজন্য ল্যাপটপের সর্বোচ্চ ব্যাবহার করলাম ল্যাপটপে এলার্ম সেট করে ল্যাপটপ চালাই রেখে। খুবই ইফিশিয়েন্ট একটা সল্যুশান।

নামাজ পড়লাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার শামিম হাসান এর সাথে। সবাই দেখি পশ্চিম দিকে হাত দিয়ে মুনাজাত ধরে উত্তর দিকে খোমা ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে ওনার দিকে তাকাই বলতেসে,"দেখ দেখ "
উনি মেবি একটু ইতস্তত বোধ করছিলেন। আমি কিন্তু তাকাই নাই৷ আমি চারপাশের সবার দিকে তাকাচ্ছিলাম।

বাসায় এসে ভাত খেয়ে আবার ঘুমালাম। উঠে দেখি রাত হয়ে গেছে৷ মধ্যাহ্ন বিরতীর পরের ঘুমেই দিনের ইনিংস শেষ। পরে জানলাম আজ (২১ শে ডিসেম্বর) শুরু হওয়া রাত এই গোলার্ধের সবচেয়ে দীর্ঘতম রাত।

খবর টা শুনেই যারা বিয়ে শাদি করলো আজ, তাদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে কোন এক দিন তাদের ক্লাবে ঢোকার ইচ্ছা ঠিক করে রাখলাম।

আজ রাতে গান গাইবো
"নির্ঘুম চোখ জানালায় আমি নিজেকে শুনাই নিজের গান "

আক্ষরিক অর্থেই নির্ঘুম। কারণ, দিনে ধুমসে ঘুম গেসি। অথচ একজন ব্যাচেলর হিসেবে রাত টার সদব্যাবহার করা উচিৎ ছিল।।সব উলটা পালটা। যেমন আজকের দিনটার দিন আর মাসের ডিজিট ( 21 / 12 / 2018 )

-- রিফাত আহাম্মেদ
২১.১২.২০১৮

No comments:

Post a Comment

মাতাল নদীর রোদ ও পিংক ফ্লয়েড

এক লোক ট্রল করে ফেবু তে এই লোকের গাওয়া পিংক ফ্লয়েডের উইশ ইউ আর হিয়ার এর বাংলা ভার্শান দিলো ।  বাট আমার গান টা অসম্ভব ভালো লাগে । এক ধরণের ঘো...