Sunday, 5 April 2020
ঈদ
'ঈদ" দুইটা বর্ণের একটা শব্দ মাত্র, অথচ চিন্তা সীমার বাইরে চোখের সামনে হাজারো সুখের অনুভূতি হাজির করতে সক্ষম। ক্যালেন্ডারের পাতা দিয়ে বই বাঁধাতে বাঁধাতে হঠাৎ মাঠে ঘাটে ঈদ মোবারক বলার সময়টা কখন যেন এসে গেছে নীরবে। ঈদের আগের এই সময় টা তে সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠে নানা রকমের যানবাহন। ট্রেন বাস লঞ্চের টিকেট লাইনে বাঙ্গালির 'ধৈর্যহারা' বদনাম টার বিপক্ষে সবাই সম্মিলিত ভাবে সাক্ষ দেয়। ঘন্টার পর মিনিট, মিনিটের পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট পেয়ে প্রাক-ঈদ আনন্দ উৎসব শুরু করে। যারা স্থলপথের যাত্রী, তাদের নানা রকমের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ এই বাড়ি ফেরা যাত্রা। এই যাত্রাপথে তারা শুনতে পারে বিভিন্ন সূরে "ওয়াক-বোয়াক" তালে গাওয়া অন্য সহযাত্রীর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী গান। জানতে পারে কচ্ছপ আর খরগোশ এর দৌড় প্রতিযোগিতায় কচ্ছপের সঠিক গতি সম্পর্কে। ধীর হলেও তারা জানে, কচ্ছপের মত গাড়িও ফিনিশিং লাইন পৌছোবেই ঠিকি। এছাড়া পর্যবেক্ষনের এক সুবিশাল ক্ষেত্র ত আছেই। কুরবানির ঈদে ঘরমুখো মানুষদের সাথে রাজপথে থাকে বাজারমুখো গরু ছাগল। তারা সুনিপুণ ভাবে লেজ নাড়িয়ে আসন্ন জৈব সার অথবা ট্রাকের মেঝেতে ঝর্ণা ধারা বইয়ে দেওয়ার নিশ্চুপ জানান দেয়। পেছনের গাড়ির চালক এবং সামনের সিটের যাত্রী রা গ্লাস দিয়ে সেই অমায়িক বীভৎস গোবরীয় ব্যাপার দেখতে থাকে। চলতে চলতে যখন গাড়ির সাউন্ডবক্সে বাজতে থাকে, "এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হত তুমি বল তো " , তখন পেছন থেকে কোন বিদ্রোহী জনতা "গান বন্ধ কর। হাউয়ার গান লাগাইসে" বলে গান মিশ্রিত আনন্দঘন পরিবেশটা নষ্ট করে দেয় মুহূর্তেই। এরই মধ্যে যাত্রা বিরতি নামক পরম আকাঙ্ক্ষিত একটা ব্রেক এসে পড়ে। যাত্রা বিরতির শুরুতেই নিজের উপর জমিয়ে রাখা ক্ষোভ, রাগ ঝেড়ে ফেলতে সবাই ছোটে টয়লেটে। 'ত্যাগেই প্রকৃত সুখ' উপলব্ধি করেই 'ভোগেও সুখ আছে' ভেবে একটা জম্পেশ খাওয়া দেয়। সবাই খাওয়ার পাশাপাশি নিজ গাড়ির ড্রাইভার এর দিকে কিছুক্ষন পর পর তাকিয়ে দেখে নিশ্চিত হয় - গাড়ি গাড়ির জায়গাতেই আছে। আবার যাত্রা শুরু। এই ধাপে একটা প্রফুল্ল ভাব বিরাজ করে সবার মাঝে। ফ্যান গুলো আবার ক্যাঁত ক্যাঁত আওয়াজে সরব হয়ে যায়। বিরক্তিকর ভাবে একটু বাতাস দিয়ে ঘাড় ত্যাড়া করে আরেক দিকে ফিরে যায়। আবার অনেক সময় পর এসে বাতাস দেয় একটু। বাড়ি যখন আর অল্প দূরে, তখন সবাই ভাবে, কিভাবে ঘরে ঢুকতে হবে। ধুম করে দড়জা খুললে বাবা মা কে জড়িয়ে ধরবে? নাকি উচ্চ স্বরে "এসে গেসিইইই " বলে চেঁচাবে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ব্যাগ টেনে সিড়ি দিয়ে উঠে দড়জা খুললে কোন নাটকিয়তা ছাড়াই "আসসালামু আলাইকুম" বলে ঢুকে পড়া। যারা চাকুরীজীবী, তারা তাদের মা বাবা ছোট ভাই বোন দের সামনে তার ছোট ব্যাগ টা খুলে ভেতর থেকে সবার জন্য ঈদের কেনা জামা কাপড় বের করতে থাকে। মুহূর্তেই সেই জামাকাপড় থেকে ভালোবাসার সুগন্ধে চার পাশ ভরে যায়। আর যারা ছাত্র, তারাও নিজের জামা কাপড় থেকে হঠাৎ হঠাৎ ছোট খাটো বাবা মা ভাই বোনের শখের জিনিস বের করে। মা বকুনি দিয়ে বলে, "তোরে এগুলো আনতে বলসে কে? " কি মায়া, কি মধুর সেই বকুনি গুলো। দেখতে দেখতে ঈদের দিন আসে। সবাই নিজ নিজ ঘুমের রুটিন এর চেয়ে তাড়াতাড়ি উঠতে চেষ্টা করে। খুশির চোটে ঘুম থেকে উঠে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে চারপাশ। পরিপাটি হয়ে ঈদগাহে যায়। ঈদের নামাজে ভুল করে রুকু তে চলে যায়, পরে পাশের জন কে দেখে তাৎক্ষণাত তা ঠিক করে ফেলে। কখনো বৃষ্টি হয়। কখনো আকাশে আগুন ঝরে। তবে এসবের মধ্যেও বাতাসে 'ঈদ' ভাসে। তাকালেই দেখা যায়। পরবার, বা বন্ধুবান্ধব, এখানে সেখানে ওড়া, ঘুম দেওয়া, কাজ করা, নামাজ এর কথা বেমালুম ভুলে যাওয়া... পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া কাটানো একটা দিন। আর পরের দিন সকালে উঠে "ঈদ কেমন কাটসে? " প্রশ্নের উত্তরে "এই কাটসে আরকি কোনরকম" বলা... ঈদের দ্বিতীয় দিন, তৃতীয় দিন, চতুর্থ দিন। চ্যানেল গুলোর ঈদ আয়োজন শেষ হতে থাকে। তবে BTV তে ঈদ থামেনা। চলছেই ঈদ। ঈদের অষ্টম দিন বা নবম দিন হঠাৎ আচমকা 'ঈদ মুবারক ' লেখা টা গায়েব হয়ে যায় BTV এর বুক থেকে। তখন বুঝা যায়, এবার চলতে শুরু করেছে যন্ত্র গুলো। মেরুদন্ড গুলো আবার বয়ে যেতে শুরু করেছে ১৫/২০ কেজি 'বই' নামক বাটখারা...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
মাতাল নদীর রোদ ও পিংক ফ্লয়েড
এক লোক ট্রল করে ফেবু তে এই লোকের গাওয়া পিংক ফ্লয়েডের উইশ ইউ আর হিয়ার এর বাংলা ভার্শান দিলো । বাট আমার গান টা অসম্ভব ভালো লাগে । এক ধরণের ঘো...

-
ছোটবেলায় একবার খাতায় কলম দিয়ে নদী আর নদীতে পানি আঁকছিলাম। সবে মাত্র পেন্সিল থেকে কলমে গিয়েছি, তাই হুট হাট কলম ধরার ব্যাপারে আম্মুর অলিখিত নি...
-
২৬ নভেম্বর ২০১৩ ( ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারের সময়কার , সবে স্কুল ছাড়ার কষ্ট একটু একটু করে বুকে লাগা আরম্ভ করেছিল মাত্র ) নোয়াখালী জিলা স্কুল -...
No comments:
Post a Comment